• আপডেট পোষ্ট

    Saturday, April 15, 2017

    সহজ ভাষায় সার্কিট ব্রেকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য


    সার্কিট ব্রেকার কি?

    সার্কিট ব্রেকার হচ্ছে নিরাপত্তা প্রদানকারী অর্ধ স্বয়ংক্রিয় (semi automatic) যন্ত্র বিশেষ। এটি এমন একটি ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা অপর কোন ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে নিরাপদ রাখে। কোন কারণে এসি লাইনে যদি অতিরিক্ত পরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তাহলে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যন্ত্রপাতি পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আগুন লাগাও বিচিত্র নয়। যেমন-
    • কোন কারণে যদি এসি লাইনে শর্ট সার্কিট (Short Circuit) ঘটে,
    • মাত্রাতিরিক্ত লোড লাগানো (ওভার লোড), কিংবা
    • যদি কোন কারণে আপনার বাসার লাইন ভোল্টেজ বেড়ে যায় (ফলে কারেন্টের প্রবাহ বৃদ্ধি হয়)।
    এসমস্ত ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার নিজে থেকেই ট্রিপ (Trip) করে বা বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে মূল্যবান যন্ত্রপাতি কে রক্ষা করে।

    উৎপত্তি

    প্রাথমিক ভাবে বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ১৮৭৯ সালে তাঁর পেটেন্টে সার্কিট ব্রেকারের বর্ণনা করেন। যদিও তাঁর বাণিজ্যিক যন্ত্রগুলোতে পরবর্তিকালে ফিউজ ব্যবহার করা হয়। মূলত তাঁর আবিষ্কৃত ফিলামেন্ট বাল্ব ও আলোক বিতরণী সার্কিট সমূহকে দূর্ঘটনা বশত শর্ট সার্কিট এবং ওভার লোড থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই এটি ব্যবহৃত হয়েছিল।
    পরবর্তীকালে ১৯২৪ সালে ক্ষুদ্রকায় সার্কিট ব্রেকারের পেটেন্ট করেন Brown, Boveri & Cie নামক কোম্পানি যা আধুনিক সার্কিট ব্রেকার গুলোর পথ প্রদর্শক।

    দেখতে কেমন?

    বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকার গুলো মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার (MCB) নামেও পরিচিত। সেগুলোর আকার বেশ ছোট। চালু ও বন্ধ করার জন্য তার সামনে একটি লিভার (lever) মত থাকে যাকে অপারেটর (Operator) নামে ডাকা হয়।
    নিচে বেশ কয়েক ধরণের সার্কিট ব্রেকারে চিত্র দেয়া হলো-
    বাসা-বাড়িতে বহুল ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকারের চিত্র, একে MCB ও বলে
    অপরদিকে পাওয়ার সাবস্টেশনে ব্যবহার হয় আরো বড় আকারের হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার-
    পাওয়ার সাবস্টেশনে ব্যবহৃত হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার
    এছাড়াও ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকারও আছে। নিচে পিসিবি তে তৈরি এমনি একটি ইলেকট্রনিক ব্রেকারকে দেখতে পাচ্ছি-
    পিসিবি তে প্রস্তুতকৃত ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার যা আলাদা ব্যাটারি পাওয়ার দিয়েও চলতে সক্ষম

    আভ্যন্তরীন গঠন

    নিচের ছবিতে আমরা সাধারণ বাসা-বাড়িতে বহুল ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকারের অভ্যন্তরীন গঠন দেখতে পাচ্ছি। একে এমসিবি বা মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার নামেও ডাকা হয় (MCB – Miniature Circuit Breaker) তা আগেই জেনেছি।
    চিত্র খেয়াল করলে MCB টিতে বামে কালো রঙের লিভার সুইচ যাকে Operator বলে, তা দেখতে পাচ্ছি। উপরে ও নিচে আপার টার্মিনাল ও লোয়ার টার্মিনাল দ্বয় দেখা যাচ্ছে যার মাধ্যমে কোন সাপ্লাই থেকে লোডে সংযোগ দেয়া হয়।
    সাধারণ সার্কিট (MCB) ব্রেকারের অভ্যন্তরীণ গঠন
    নিচের চিত্রে একটি হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকারের পার্শ্বচ্ছেদের চিত্র ও তারই পাশে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের কে তা পাওয়ার সাবস্টেশনে বসানোর চিত্র দেখতে পাচ্ছি।
    হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন ও প্রায়োগিক চিত্র
    নিচের ড্রইংটিতে আমরা ২৫ কিলো ভোল্ট সিংগেল ফেজ এয়ার সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন অংশ সমূহ দেখতে পাচ্ছি-
    ২৫ কিলো ভোল্ট সিংগেল ফেজ এয়ার সার্কিট ব্রেকারের আভ্যন্তরীন বিভিন্ন অংশ সমূহ।

    সার্কিট ব্রেকারের সিম্বল

    নিচে এর ইলেকট্রকাল সিম্বল দেখতে পাচ্ছি যেখানে-
    • A – ম্যানুয়েল টাইপ
    • B – থার্মাল ওভার লোড টাইপ ও
    • C – ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ওভার লোড টাইপ
    সার্কিট ব্রেকারের ইলেকট্রিক্যাল/ইলেকট্রনিক সিম্বল সমূহ

    সার্কিট ব্রেকার কত প্রকার

    সার্কিট ব্রেকারকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-
    • লো ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার
    • ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকার
    • থার্মাল ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকার
    • কমন ট্রিপ ব্রেকার
    • মিডিয়াম ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার
    • হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার
    • সালফার হেক্সাফ্লুরাইড হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার
    • ডিসকানেক্টিং সার্কিট ব্রেকার
    • কার্বন ডাই অক্সাইড হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্রেকার
    • অন্যান্য
    আমরা বাসা বাড়িতে যেসব মিনিয়েচার টাইপ সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করি সেগুলো সাধারণত লো ভোল্টেজ টাইপের সার্কিট ব্রেকার।
    অন্যান্য ধরণের সার্কিট ব্রেকারের মধ্যে আছে-
    • আরসিডি বা রিসিডিউয়াল কারেন্ট ডিভাইস (RCD) – এটি সম্পূর্ণ বর্তনিতে প্রবাহিত কারেন্টের ভারসাম্য পর্যবেক্ষণ করে। কোন কারণে এই কারেন্টের ভারসাম্য নষ্ট হলে (যেমনঃ আর্থ (Earth) এবং লাইভ (Live) তার শর্ট হলে বা মাত্রার অতিরিক্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ আর্থ এ প্রবেশ করলে) এটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা ট্রিপ (Trip) করে। কিন্তু এটিতে ওভার লোড প্রোটেকশন ব্যবস্থা থাকে না।
    • রিসিডিউয়াল কারেন্ট ব্রেকার উইথ ওভার কারেন্ট প্রোটেকশন (RCBO) – উপরোক্ত সুবিধা সহ এটিতে ওভার লোড প্রোটেকশন ব্যবস্থা সংযুক্ত থাকে।
    • আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার (ELCB) – এটি সরাসরি আর্থ লাইন দ্বারা প্রবাহিত কারেন্টের মাত্রার উপরে মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বর্তমানে এই ধরণের ডিভাইস আর তেমন ব্যবহার হয়না কারণ এ ধরণের ডিভাইস বিভিন্ন সঙ্কটাপন্ন অবস্থার পার্থক্য ধরতে অপারগ।
    উপরিউক্ত ৩টি সার্কিট ব্রেকার মূলত আর্থ বা গ্রাউন্ড ফল্ট থেকে যন্ত্রপাতি ও ব্যবহারকারী কে সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত হয়।

    কিভাবে কাজ করে সার্কিট ব্রেকার

    আমরা আগেই জেনেছি যে, কোন কারণে যদি ওভারলোড হয় বা শর্ট সার্কিট ঘটে তাহলে সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হয় যায়। কিন্তু কিভবে এই কাজটি ঘটে তা বেশ মজার। আগ্রহী পাঠকের জন্য সে ব্যাখ্যাটিই তুলে ধরছি। তবে বিভিন্ন ধরণের সার্কিট ব্রেকারে এই পদ্ধতিটিও ভিন্ন।

    ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক টাইপ সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে

    একতি স্প্রিং চালিত পুশ টু অন সুইচ ব্যবহার করা হয় এই কাজে। অনেকটা কলিং বেলে বহুল ব্যবহৃত গোলাকার পুশ সুইচের মতোই, কিন্তু এটি আরো দৃঢ় ও সুসংবদ্ধ। এর সাথে ব্যবহার করা হয় একটি স্প্রিং লোডেড আয়রন বোল্ট। নিচের চিত্র দেখলে বুঝতে সুবিধা হবে আশাকরি-
    সরল ভাবে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারের কার্য প্রণালি
    • সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি এমন ভাবে সাজানো থাকে যার ফলে পুশ সুইচ কে চেপে অন করা হলে তা নির্দিষ্ট স্থানে আটকে যায় অপরদিকে সুইচের ২ প্রান্ত কে পরষ্পর সাথে সংযুক্ত করে দেয়। চিত্রে  কমলা রঙ  দ্বারা সুইচের স্পর্শক প্রান্ত (Contact point) দেখানো হয়েছে।
    • অপরদিকে, নির্দিষ্ঠ স্থানে আটকে রাখা বা “লক” করবার জন্য ব্যবহৃত আয়রন বোল্ট টির ঠিক পেছনেই একটি ইলেকট্রো ম্যাগনেট রাখা হয়। এটি প্রকৃতপক্ষে সলিনয়েড (Solenoid) বা তারের কুণ্ডলী যার মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হলে এটি অস্থায়ী চুম্বকে পরিণত হয়।
    • সম্পূর্ন ব্যবস্থাটি এমন ভাবে করাহয় যেন-স্প্রিং লোডেড পুশ সুইচ কে অন করলে লোডে পাওয়ার পাবে, একই সাথে
    • সলিনয়েডের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে এবং একে অল্প পরিমানে চুম্বকায়িত করবে।
    • এই ব্যবস্থার ফলে নির্দিষ্ঠ সীমার অতিরিক্ত লোড লাগানো হলে উক্ত সলিনয়েডের মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে সলিনয়েড টি নির্দিষ্ঠ সীমার অতিরিক্ত পরিমাণ চুম্বকায়িত হয়ে স্প্রিং বোল্ট কে নিজের দিকে টেনে নিয়ে পুশ সুইচ কে মুক্ত করে দিবে।
    • পুশ সুইচ টি মুক্ত হয়ে তার আভ্যন্তরীন স্প্রিং এর চাপে নিজেকে উপর দিকে ঠেলে উঠিয়ে দেবে যার ফলে স্পর্শক প্রান্তদ্বয় মুক্ত হয়ে যাবে যা লোডের থেকে পাওয়ারকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
    ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকারে ওভার লোড হলে অভ্যন্তরে যা ঘটে
    ওভার লোড হলে কিংবা শর্ট সার্কিট ঘটলে এই প্রক্রিয়ায় এই ধরণের ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয় ভাবে লোডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সমূহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এখানে উল্লেখ্য যে প্রায় সব ধরণের সার্কিট ব্রেকারই সেমি অটোমেটিক বা অর্ধ স্বয়ংক্রিয়। অর্থাৎ, ওভার লোডের কারণে এটি বন্ধ হলে একে ম্যানুয়ালি অন করতে হয়

    No comments:

    Post a Comment

    Fashion

    Beauty

    Travel